ঝালকাঠি ব্যুরো ॥ ঝালকাঠি জেলা পুলিশ শীর্ষস্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীর নাম তালিকা প্রস্তুত করা হলেও একশ্যান শুরুর পূর্বেই বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় গা-ডাকা দিয়েছে বড়-মাঝারি মাদক ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট সদস্যরা। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে স্থানীয় ১০০ জনের বেশী মাদক ব্যবসায়ীর নাম তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে একটি সুত্র জানালেও ঠিক কত জনের নাম এ তালিকায় রয়েছে তা প্রকাশ করতে চাচ্ছেনা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তবে বিশেষ অভিযান চালানোর পর থেকে ঝালকাঠিতে অনেক চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছেনা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মহা পুলিশ পরিদর্শকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যাপক তৎপরতার মুখে মাদক প্রতিরোধে ঝালকাঠি জেলা পুলিশ তৎপর হয়ে উঠলেও তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ভাসমান মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ঠিকানা পরিবর্তন করেছে ইতিমধ্যেই। অন্যন্য জেলা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাদক ব্যাবসায়ী গ্রেফতার হলেও ঝালকাঠিতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে থাকলেও গ্রেফতারের সংখ্যা একাবারেই নগন্য। ঝালকাঠিতে ডিবি ও পুলিশের পৃথক বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ৩৬৪ পিস ইয়াবা ও ৫৭০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজন নারী, এক ছাত্রদল ও যুবলীগ নেতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ঝালকাঠি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গির আলম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। ঝালকাঠি জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, মাদক ব্যবসায়ী দিন দিন বাড়ছে, পরিবর্তন হচ্ছে। তাই তাদের তালিকা প্রতিদিনই আপডেট হচ্ছে। ঝালকাঠি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তালিকা আগে থেকেই প্রস্তুত করা ছিল। তবে কত জনের নাম আছে বা ঐ তালিকায় কারা আছে তাদের পরিচয় জানাতে অপরগতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, কৌশলগত কারনেই কোন মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা প্রকাশ করা যাবেনা। চলতি মাসে ২৫ তারিখ পর্যন্ত জেলায় মোট ৪৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে ১০০ জনের মত আসামি করা হলেও ৫০ জনের মত আটক ও গ্রেফতার হয়েছে। এ ব্যপারে ঝালকাঠি পুলিশ সুপার মো. জোবায়েরের কাছে জানতে চাইলে তিনি একটি সভায় আছেন বলে মুঠোফোনে জানান। তবে একটি সূত্র জানায়, জেলার প্রতিটি থানাধীন মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা চুরান্ত করার পর গ্রেফতার শুরুর প্রস্তুতী নিলেও অভিযানের সংবাদ আগেই ছড়িয়ে পরায় সকলেই আত্মগোপনে চলে গেছে। তাছাড়াও গত কয়েক দিনে সারা দেশে প্রায় ২৫ মাদক ব্যবসায়ী নিহতের খবরেও দেশজুড়ে মাদক ব্যবসায়ী চক্রের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ক্রসফায়ারের ঘটনার পর ঝালকাঠি মাদকের স্পট হিসেবে চিহ্নিত এলাকার অনেক মাদক ব্যবসায়ী লাপাত্তা হয়ে গেছে। তবে চিহিৃত মাদক স¤্রাট অনেককেই এখন আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে চিহ্নিত আস্তানা গুলোতে। একই পরিবেশ বিরাজমান শহরের প্রতিটি এলাকায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কড়াকড়ি আরোপে গোটা ঝালকাঠি অনেকটা মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনামুক্ত। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ মাদক বিক্রেতার একটি তালিকা সাম্প্রতিকালে প্রণয়ন করে ঢাকা হেডকোয়াটার্সে পাঠায়। ওই তালিকা থেকে সেবীদের বাদ দিয়ে অর্ধ-শত মাদক ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই চিহ্নতদের গ্রেফতারে নির্দেশ দেয় হেডকোয়ার্টাস। তবে অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় রয়েছে ১০৬ মাদক ব্যবসায়ী। ঐ তালিকাটি প্রধানমন্ত্রী সহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলছেন- পুলিশের এই ঘোষণা দিয়ে ধরপাকড়ে বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেড়েছে চিহ্নিতরা। ফলে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা আগে ভাগেই কেটে পড়েছেন। এখন যাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে তারা খুচরো ব্যবসায়ী ও মাদক সেবী। যাদের নামে মামলা বা মাদকসহ আটক হয়েছে এমন লোকদের কোন অভিযোগ ছাড়াই অন্য মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে মামলায় আসামি করে আদালতে পাঠাচ্ছে। কাউকে আবার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ ডিবি।
Leave a Reply